আর তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। আর যদি নির্ধারিত কাল না থাকত তবে শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর আসত। আর নিশ্চয় তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, অথচ তারা উপলদ্ধিও করবে না।
হে আমার মুমিন বান্দাগন! নিশ্চয় আমার যমীন প্রসস্ত; কাজেই তোমরা আমারই ইবাদাত কর [১]।
[১] আলোচ্য আয়াতে মুসলিমগণের জন্যে কাফেরদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা, সত্য প্রচার করা এবং দুনিয়াতে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার একটি কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। এই কৌশলের নাম ‘হিজরত’ তথা দেশত্যাগ। অৰ্থাৎ যে দেশে সত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে ও কাজ করতে বাধ্য হতে হয়, সেই দেশ পরিত্যাগ করা। আল্লাহ বলেছেন, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। কাজেই কারও এই ওযর গ্রহণ করা হবে না যে, অমুক শহরে অথবা দেশে কাফেররা প্রবল ছিল বিধায় আমরা তাওহীদ ও ইবাদাত পালনে অপারগ ছিলাম। তাদের উচিত, যে দেশে কূফর ও অবাধ্যতা করতে বাধ্য করা হয়, আল্লাহর জন্যে সেই দেশ ত্যাগ করা এবং এমন কোনো স্থান তালাশ করা, যেখানে স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে আল্লাহর নির্দেশাবলী নিজেরাও পালন করতে পারে এবং অপরকেও উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আর এজন্যই সাহাবায়ে কিরাম হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্য সাহাবীগণ মদীনায় হিজরত করেছিলেন। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; তারপর তোমরা আমাদেরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে [১]।
[১] হিজরতের পথে প্রথম বাধা হলো, মৃত্যুর ভয়। স্বদেশ পরিত্যাগ করে অন্যত্র যাওয়ার মধ্যে মানুষ প্রথম যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয় তা হলো, নিজের প্রাণের আশংকা, স্বদেশ ত্যাগ করে অন্যত্র রওয়ানা হলে পথিমধ্যে স্থানীয় কাফেরদের সাথেও প্রাণঘাতী সংঘর্ষের আশংকা বিদ্যমান থাকে। আয়াতে এই আশংকার জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেউ কোথাও কোনো অবস্থাতেই মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পাবে না। কাজেই মৃত্যুর ভয়ে অস্থির হওয়া মুমিনের কাজ হতে পারে না। তাই স্বস্থানে থাকা অথবা হিজরত করে অন্যত্র চলে যাওয়ার মধ্যে মৃত্যুর ভয় অন্তরায় না হওয়া উচিত। [ফাতহুল কাদীর] বিশেষতঃ আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করা অবস্থায় মৃত্যু আসা চিরস্থায়ী সুখ ও নেয়ামতের কারণ। আখেরাতে এই সুখ ও নেয়ামত পাওয়া যাবে। তাই প্ৰাণের কথা ভেবে ঈমান ও হিজরত থেকে পিছপা হয়ো না।
আর যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আমরা অবশ্যই তাদের বসবাসের জন্য সুউচ্চ প্রসাদ দান করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত [১], যেখানে তারা স্থায়ী হবে, কত উত্তম প্রতিদান সে সকল কর্মশীলদের জন্য,
[১] সে সমস্ত প্রাসাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘নিশ্চয় জান্নাতে এমন প্রাসাদ আছে যার অভ্যন্তর থেকে বাইরের অংশ দেখা যায়, আর বাইরের অংশ থেকে অভ্যন্তরের অংশ দেখা যায়। আল্লাহ তা তাদের জন্যই তৈরী করেছেন যারা খাবার খাওয়ায়, নরমভাবে কথা বলে, পরপর সাওম রাখে আর মানুষের নিদ্রাবস্থায় সে সালাত আদায় করে।’ [মুসনাদ ৫/৩৪৩]
যারা ধৈর্য ধারন করে [১] এবং তাদের রবের উপরই তাওয়াক্কুল করে [২]।
[১] অর্থাৎ যারা সব রকমের সমস্যা, সংকট, বিপদ-আপদ, ক্ষতি ও কষ্টের মোকাবিলায় ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। যারা ঈমান আনার বিপদ নিজের মাথায় তুলে নিয়েছে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। ঈমান ত্যাগ করার পার্থিব উপকারিতা ও মুনাফা যারা নিজের চোখে দেখেছে। কিন্তু এরপরও তার প্রতি সামান্যতমও ঝুঁকে পড়েনি। যারা কাফের ও ফাসেকদেরকে নিজেদের সামনে ফুলে ফোঁপে উঠতে দেখেছে এবং তাদের ধন-দৌলত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তির দিকে ভুলেও নজর দেয়নি। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর কাছে যা আছে তা পাওয়ার আশায়, তাঁর ওয়াদার সত্যতায় বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, শক্ৰদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে এসেছে, তাদের জন্যই স্থায়ী জান্নাত রয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ যারা নিজেদের সহায়-সম্পত্তি, কাজ-কারবার ও বংশ-পরিবারের ওপর ভরসা করেনি বরং দীন ও দুনিয়ার প্রতিটি কাজে নিজেদের রবের ওপর ভরসা করেছে। তারাই উক্ত জান্নাতের অধিকারী। [দেখুন, ইবন কাসীর] যারা দুনিয়াবী উপায় উপাদানের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিছক নিজেদের রবের ভরসায় ঈমানের খাতিরে প্রত্যেকটি বিপদ সহ্য করার জন্য তৈরী হয়ে যায় এবং সময় এলে বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ে। যারা নিজেদের রবের প্রতি এতটুকু আস্থা রাখে যে, ঈমান ও নেকীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রতিদান তাঁর কাছে কখনো নষ্ট হবে না এবং বিশ্বাস রাখে যে, তিনি নিজের মুমিন ও সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে এ দুনিয়ায় সহায়তা দান করবেন এবং আখেরাতেও তাদের কার্যক্রমের সর্বোত্তম প্রতিদান দেবেন।
আর এমন কত জীবজন্তু রয়েছে যারা নিজেদের রিযিক মজুদ রাখে না। আল্লাহ্ই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে; আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বাজ্ঞ [১]।
[১] হিজরতের পথে দ্বিতীয় আশংকা এই যে, অন্য দেশে যাওয়ার পর রুয়ী রোজগারের কি ব্যবস্থা হবে? জন্মস্থানে তো মানুষ কিছু পৈতৃক সম্পত্তি, কিছু নিজের উপার্জন দ্বারা বিষয়-সম্পত্তির ব্যবস্থা করে থাকে। হিজরতের সময় এগুলো সব এখানে থেকে যাবে। কাজেই পরবর্তী পর্যায়ে জীবননির্বাহ কিরূপে হবে? এ আয়াতসমূহে এর জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, অর্জিত আসবাবপত্রকে রিযিকের যথেষ্ট কারণ মনে করা ভুল। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা'আলাই রিযিক দান করেন। তিনি ইচ্ছা করলে বাহ্যিক আয়োজন ছাড়াও রিযিকদান করেন এবং ইচ্ছা না করলে সব আয়োজন সত্বেও মানুষ সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে। প্রমাণস্বরূপ প্রথম বলা হয়েছে, চিন্তা কর, পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন হাজারো জীব-জন্তু আছে যারা খাদ্য সঞ্চয় করার কোনো ব্যবস্থা করে না। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা নিজ কৃপায় প্রত্যহ তাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করেন। পৃথিবীর অসংখ্য ও অগণিত প্রকার জীব-জন্তুর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থা এই যে, তারা খাদ্য সংগ্ৰহ করার পর আগামীকালের জন্যে তা সঞ্চিত রাখে না এবং এর প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জামও তাদের নেই। [দেখুন, ইবন কাসীর] হাদীসে আছে, ‘পক্ষীকূল সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে।’ তিরমিয়ী ২৩৪৪] অথচ তাদের না আছে ক্ষেত-খলা, না আছে জমি ও বিষয়-সম্পত্তি। তারা কোনো কারখানা অথবা অফিসের কর্মচারীও নয়। তারা আল্লাহ্ তা'আলার উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং পেটভর্তি খাদ্যলাভ করে। এটা একদিনের ব্যাপার নয়। বরং তাদের আজীবন কর্মধারা।
আর যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, 'কে আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র-সূর্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন?' তারা অবশ্যই বলবে, 'আল্লাহ্'। তাহলে কোথায় তাদের ফিরানো হচ্ছে !
আর যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাস করেন, 'আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে কে ভূমিকে সঞ্জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর?' তারা অবশ্যই বলবে, 'আল্লাহ্'। বলুন, 'সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই' [১]। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা অনুধাবন করে না।
[১] এখানে “সমস্ত প্ৰশংসা আল্লাহর জন্য” শব্দগুলোর দু'টি অর্থ প্রকাশিত হচ্ছে। একটি অর্থ হচ্ছে, এসব যখন আল্লাহরই কাজ তখন একমাত্র তিনিই প্ৰশংসার অধিকারী। অন্যেরা প্রশংসা লাভের অধিকার অর্জন করলো কোথায় থেকে? দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, আল্লাহর শোকর, তোমরা নিজেরাও একথা স্বীকার করছো। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
លទ្ធផលស្វែងរក:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".