হে ঈমানদারগণ! কাফেরদের মধ্যে যারা তোমাদের কাছাকাছি তাদের সাথে যুদ্ধ কর [১] এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা [২] দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
[১] এ আয়াতসমূহে কোন নিয়মে কাফেরদের সাথে জিহাদ করা হবে তা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, আয়াতে বলা হচ্ছে যে, কাফেরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী, প্রথমে তাদের সাথে জিহাদ করবে। এখানে নিকট বলে নিকটবর্তী অবস্থান ও নিকট সম্পর্ক এ দু'রকমের হতে পারে। [বাগভী] (এক) অবস্থানের দিক দিয়ে অর্থাৎ যারা তোমাদের নিকটে অবস্থানকারী, প্রথমে তাদের সাথে জিহাদ কর। [ইবন কাসীর] (দুই) গোত্র, আতীয়তা ও সম্পর্কের দিক দিয়ে যারা নিকটবতী অন্যান্যদের আগে তাদের সাথে জিহাদ চালিয়ে যাও। [বাগভী] যেমন, আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ দিয়ে বলেন, “হে রাসূল, নিজের নিকটআত্মীয়গণকে আল্লাহর আযাবের ভয়প্রদর্শন করুন।" [সূরা আশ-শু'আরা ২১৪] তাই তিনি এ আদেশ পালনে সর্বাগ্রে স্বগোত্রীয়দের সমবেত করে আল্লাহর বাণী শুনিয়ে দেন। অনুরূপ, তিনি স্থান হিসাবে প্রথমে মদীনার আশ-পাশের কাফের তথা বনু কোরাইযা, বনু নদীর ও খায়বরবাসীদের সাথে বুঝাপড়া করেন। তারপর পূর্ববতী লোকদের সাথে জিহাদ করেন এবং সবশেষে রোমানদের সাথে জিহাদের আদেশ আসে, যার ফলে তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। [ইবন কাসীর]
[২] غلظة শব্দের অর্থ: কঠোরতা। [ফাতহুল কাদীর, ইবন কাসীর] কারণ, প্রকৃত মুমিন সেই ব্যক্তি যে, ঈমানদারদের সাথে নরম ব্যবহার করে, আর কাফেরদের সাথে থাকে কঠোর। [ইবন কাসীর] সুতরাং তাদের সাথে এমন ব্যবহার কর, যাতে তোমাদের কোন দুর্বলতা তাদের চোখে ধরা না পড়ে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা এ নির্দেশটি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দীন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে।" [সূরা আল-মায়েদাহ ৫৪] আরও বলেন, "মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।” [সূরা আল-ফাতহ ২৯] আরও বলেন, “হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন।" [সূরা আত-তাওবাহ ৭৩. আততাহরীম ৯]
আর যখনই কোনো সূরা নাযিল হয়। তখন তাদের কেউ কেউ বলে, ‘এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল [১]? অতঃপর যারা মুমিন এটা তাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারাই আনন্দিত হয়।
[১] আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, কুরআনের আয়াতের তেলাওয়াত, চিন্তা-ভাবনা এবং সে অনুযায়ী আমল করার ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। তার উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি ঘটে। ঈমানের নূর ও আস্বাদ বৃদ্ধি পায়। ফলে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা সহজ হয়ে উঠে। ইবাদাতে স্বাদ পায়, গুনাহের প্রতি স্বাভাবিক ঘৃণা জন্মে ও কষ্টবোধ হয়। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঈমান যখন অন্তরে প্রবেশ করে, তখন এটি নূরের শ্বেতবিন্দুর মত দেখায়। তারপর যতই ঈমানের উন্নতি হয়, সেই শ্বেতবিন্দু সম্প্রসারিত হয়ে উঠে। এমনকি শেষ পর্যন্ত গোটা অন্তর নূরে ভরপুর হয়ে যায়। তেমনি গোনাহ ও মুনাফিকীর ফলে প্রথমে অন্তরে একটি কাল দাগ পড়ে। তারপর পাপাচার ও কুফরীর তীব্রতার সাথে সাথে সে কাল দাগটিও বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত গোটা অন্তর কালো হয়ে যায়। [বাগভী] এজন্য সাহাবায়ে কেরাম একে অন্যকে বলতেন আস, কিছুক্ষণ একত্রে বসি এবং দীন ও পরকাল সম্পর্কে আলোচনা করি, যাতে আমাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। [বুখারী]
তারা কি দেখে না যে, ‘তাদেরকে প্রতিবছর একবার বা দু’বার বিপর্যস্ত করা হয় [১]?’ এর পরও তারা তাওবাহ্ করে না এবং উপদেশ গ্রহন করে না।
[১] এখানে মুনাফিকদের সতর্ক করা হয়েছে যে, তাদের কপটতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ প্রভৃতি অপরাধের পরিণতিতে প্রতিবছরই তারা কখনো একবার, কখনো দু’বার নানা ধরনের বিপদে বা পরীক্ষায় নিপতিত হয়। মুজাহিদ বলেন, তারা দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধায় পতিত হয়। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অথবা রোগ-শোকে। হাসান বসরী বলেন, রাসূলের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। [কুরতুবী] তাছাড়া কখনো তাদের কাফের মিত্ররা পরাজিত হয়, কখনো তাদের গোপন অভিসন্ধি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ফলে তারা দিবানিশি... মর্মপীড়া ভোগ করে। [বাগভী]
আর যখনই কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাদেরকে কেউ লক্ষ্য করছে কি?’ তারপর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ্ তাদের হৃদয়কে সত্যবিমুখ করে দেন। কারণ, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ভালভাবে বোঝে না।
অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের যে দুঃখ-কষ্ট হয়ে থাকে তা তার জন্য বড়ই বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি তিনি করুণাশীল ও অতি দয়ালু [১]।
[১] এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের উপর তার ইহসানের কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি তাদের মধ্যে তাদেরই সমগোত্রীয় এবং তাদেরই সমভাষার লোককে প্রেরণ করেছেন। [ইবন কাসীর] এ কথাটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জাফর ইবন আবি তালিব নাজ্জাসীর দরবারে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "আল্লাহ আমাদের মধ্যে আমাদেরই একজনকে রাসূলরুপে পাঠিয়েছেন যাকে আমরা চিনি, তার বংশ ও গুণাবলি সম্পর্কেও আমরা অবহিত। তার ভিতর ও বাহির সম্পর্কে, সত্যবাদিতা, আমানতদারী সম্পর্কেও আমরা জ্ঞাত। [মুসনাদে আহমাদ ১/২০১] আরও বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল সৃষ্টির উপর, বিশেষতঃ মুমিনদের উপর বড় দয়াবান ও স্নেহশীল।
অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন, ‘আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই [১]। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা’আরশের [২] রব।‘
[১] অর্থাৎ আপনার যাবতীয় চেষ্টা-তদবীরের পরও যদি কিছু লোক ঈমান গ্রহণে বিরত থাকে, তবে ধৈর্য ধরুন এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। কারণ নবীগণের সমস্ত কাজ হল স্নেহ-মমতা ও হামদর্দির সাথে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা, তাদের পক্ষ থেকে অবজ্ঞা ও যাতনার সম্মুখীন হলে, তা আল্লাহর প্রতি সোপর্দ করা এবং তাঁরই উপর ভরসা রাখা।
[২] আরশ সম্পর্কে আলোচনা সূরা আল-আ’রাফের ৫৪ নং আয়াতে চলে গেছে।
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
លទ្ធផលស្វែងរក:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".