আর অবশ্যই আমরা সামূদ সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম এ আদেশসহ যে, ‘তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদাত কর [১],’ এতে তারা দু’দলে বিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল [২]।
[১] তুলনামূলক অধ্যায়নের জন্য সূরা আল-আ‘রাফের ৭৩ থেকে ৭৯, সূরা হূদের ৬১ থেকে ৬৮, সূরা আশ শু‘আরার ৪১ থেকে ৫৯, সূরা আল-কামারের ২৩ থেকে ৩২ এবং সূরা আশ-শামসের ১১ থেকে ১৫ আয়াত পড়ুন।
[২] অর্থাৎ সালেহ আলাইহিস সালামের দাওয়াত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই তার জাতি দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে গেলো। একটি দল মুমিনদের এবং অন্যটি অস্বীকারকারীদের। এ বিভক্তির সাথে সাথেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতও শুরু হয়ে গেলো। [ইবন কাসীর] যেমন কুরআন মজিদে বলা হয়েছে: ‘‘তার জাতির শ্রেষ্ঠত্বের গর্বে গর্বিত সরদাররা দলিত ও নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে বললো, সত্যই কি তোমরা জানো, সালেহ তার রবের পক্ষ থেকে পাঠানো একজন নবী? তারা জবাব দিল, তাকে যে জিনিস সহকারে পাঠানো হয়েছে আমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান রাখি। এ অহংকারীরা বললো, তোমরা যে জিনিসের প্রতি ঈমান এনেছো আমরা তা মানি না।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭৫-৭৬] মনে রাখতে হবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সাথে সাথে মক্কায়ও এ একই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তখনও জাতি দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছিল।
তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের আগে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ [১]? কেন তোমরা আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা রহমত পেতে পার?’
[১] অর্থাৎ আল্লাহ্র কাছে কল্যাণ চাওয়ার পরিবর্তে অকল্যাণ চাওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছো কেন? অন্য জায়গায় সালেহের জাতির সরদারদের এ উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে: “হে সালেহ! আনো সেই আযাব আমাদের উপর, যার হুমকি তুমি আমাদের দিয়ে থাকো, যদি সত্যি তুমি রসূল হয়ে থাকো।” [সূরা আল-আ‘রাফ ৭৭]
তারা বলল, ‘তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি [১]।’ সালেহ বললেন, ‘তোমাদের ‘কুলক্ষণ গ্রহণ করা’ আল্লাহ্র ইখ্তিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে [২]।’
[১] তাদের উক্তির একটি অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমার এ কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য বড়ই অমংগলজনক প্রমাণিত হয়েছে। যখন থেকে তুমি ও তোমার সাথীরা পূৰ্বপুরুষদের ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছো তখন থেকেই নিত্যদিন আমাদের উপর কোনো না কোনো বিপদ আসছে। কারণ, আমাদের উপাস্যরা আমাদের প্রতি নারাজ হয়ে গেছে। এ অর্থের দিক দিয়ে আলোচ্য উক্তিটি সেই সব মুশরিক জাতির উক্তির সাথে সামঞ্জস্যশীল, যারা নিজেদের নবীদেরকে অপয়া গণ্য করতো। সূরা ইয়াসীনে একটি জাতির কথা বলা হয়েছে। তারা তাদের নবীদেরকে বললো: “আমরা তোমাদের অপয়া পেয়েছি।” [সূরা ইয়াসীন ১৮] মূসা সম্পর্কে ফির‘আউনের জাতি এ কথাই বলতো: “যখন তাদের সুসময় আসতো, তারা বলতো আমাদের এটাই প্রাপ্য আর যখন কোনো বিপদ আসতো তখন মুসা ও তার সাথিদের কুলক্ষুণে হওয়াটাকে এ জন্য দায়ী মনে করতো।” [সূরা আল-আ‘রাফ ১৩১]
[২] অর্থাৎ তোমরা যা মনে করছো আসল ব্যাপার তা নয়। আসল ব্যাপারটি তোমরা এখনো বুঝতে পারনি। সেটি হচ্ছে, আমার আসার ফলে তোমাদের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। যতদিন আমি আসিনি ততদিন তোমরা নিজেদের মূর্খতার পথে চলছিলে। তোমাদের সামনে হক ও বাতিলের কোনো সুস্পষ্ট পার্থক্য-রেখা ছিল না। এখন তোমাদের সবাইকে যাচাই ও পরখ করা হবে অথবা আয়াতের অর্থ, তোমাদের গোনাহের কারণে তোমাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। [কুরতুবী]
আর সে শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি [১], যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সংশোধন করত না।
[১] এখানে যে শব্দটি এসেছে, তা হলো: رهط এ শব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে, ব্যক্তি। কিন্তু শব্দটির আসল অর্থ দল। অর্থাৎ ন’জন সরদার। তাদের প্রত্যেকের সাথে ছিল একটি বিরাট দল। এখানে নয় ব্যক্তির মধ্য থেকে প্রত্যেককেই رهط বলার কারণ সম্ভবতঃ এই যে, তারা তাদের অর্থ-সম্পদ, জাঁক-জমক ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে সম্পপ্রদায়ের প্রধানরূপে গণ্য হত এবং প্রত্যেকের সাথে ভিন্ন ভিন্ন দল ছিল। কাজেই এই নয় ব্যক্তিকে নয় দল বলা হয়েছে। [দেখুন, কুরতুবী]
তারা বলল, ‘তোমরা পরস্পর আল্লহর নামে শপথ গ্রহণ কর, আমরা রাতেই শেষ করে দেব তাকে ও তার পরিবার-পরিজনকে; তারপর তার অভিভাবককে নিশ্চিত করে বলব যে, ‘তার পরিবার-পরিজন হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি; আর আমরা অবশ্যই সত্যবাদী [১]।’
[১] উদ্দেশ্য এই যে, আমরা সবাই মিলে রাতের অন্ধকারে তার উপর ও তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর উপর হানা দেব এবং সবাইকে হত্যা করব। এরপর তার হত্যার দাবীদার তদন্ত করলে আমরা বলে দেব, আমরা তো তাকে হত্যা করিনি এবং কাউকে হত্যা করতেও দেখিনি। একথায় আমরা সত্যবাদী গণ্য হব। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
হুবহু এ একই ধরনের চক্রান্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে করার জন্য মক্কার গোত্রীয় সরদাররা চিন্তা করতো। অবশেষে হিজরতের সময় তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য এ চক্রান্ত করলো। অর্থাৎ তারা সব গোত্রের লোক একত্র হয়ে তার উপর হামলা করবে। এর ফলে বনু হাশেম কোনো একটি বিশেষ গোত্রকে অপরাধী গণ্য করতে পারবে না এবং সকল গোত্রের সাথে একই সংগে লড়াই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। [আল-আজুররী; আশ-শারী‘আহ ৪/১৬৬০]
আর তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমরাও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, অথচ তারা উপলব্ধিও করতে পারেনি [১]।
[১] অর্থাৎ তারা নিজেদের স্থিরীকৃত সময়ে সালেহের উপর নৈশ আক্রমণ করার পূর্বেই আল্লাহ্ তাঁর আযাব নাযিল করলেন এবং এর ফলে কেবলমাত্র তারা নিজেরাই নয় বরং তাদের সমগ্র সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গেলো। মনে হয়, উটনীর পায়ের রাগ কেটে ফেলার পর তারা এ চক্রান্তটি করেছিল। সূরা হূদে বলা হয়েছে, যখন তারা উটনীকে মেরে ফেললো তখন সালেহ তাদেরকে নোটিশ দিলেন। তাদেরকে বললেন, ব্যস আর মাত্র তিন দিন ফূর্তি করে নাও তারপর তোমাদের উপর আযাব এসে যাবে একথায় সম্ভবত তারা চিন্তা করেছিল, সালেহ আলাইহিস সালামের কথিত আযাব আসুক বা না আসুক আমরা উটনীর সাথে তারও বা দফা রফা করে দিই না কেন। কাজেই খুব সম্ভবত নৈশ আক্রমণ করার জন্য তারা সেই রাতটিই বেছে নেয়, যে রাতে আযাব আসার কথা ছিল এবং সালেহের গায়ে হাত দেবার আগেই আল্লাহ্র জবরদস্ত হাত তাদেরকে পাকড়াও করে ফেললো। [বিস্তারিত দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর]
সুতরাং এ তো তাদের ঘরবাড়ী--- যুলুমের কারণে যা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে; নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে, সে সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে [১]।
[১] অর্থাৎ তাদের জন্যই নিদর্শন রয়েছে যারা প্রকৃত অবস্থা জানে। আর যারা আল্লাহ্র আযাব ও শাস্তি নাযিল হওয়ার ব্যাপারটি সম্পর্কে সম্যক অবগত। তারা আরও জানে যে, আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুদের সাথে কি ব্যবহার করেন। তাদের এটাও জানা রয়েছে যে, যুলুমের পরিণতি হচ্ছে, ধ্বংস ও বিপর্যয়, আর ঈমান ও ইনসাফের পরিণতি হচ্ছে নাজাত ও সফলতা। [সা‘দী] কিন্তু মূর্খদের ব্যাপার আলাদা। তারা তো বলবে, সামূদ জাতি যে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয় তার সাথে সালেহ ও তার উটনীর কোনো সম্পর্ক নেই। এসব তো প্রাকৃতিক কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু চিন্তাশীল ও জ্ঞানবান লোক মাত্ৰই জানেন, কোনো অন্ধ ও বধির আল্লাহ্ এ বিশ্ব-জাহানের উপর রাজত্ব করছেন না বরং এক সর্বজ্ঞ ও পরম বিজ্ঞ সত্তা এখানে সকলের ভাগ্যের নিষ্পত্তি করছেন।
আর স্মরণ করুন লূতের কথা [১], তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘তোমরা জেনে-দেখে [২] কেন অশ্লীল কাজ করছ?
[১] কওমে লূতের কাহিনী তুলনামূলক অধ্যায়নের জন্য দেখুন আল আ‘রাফ ৮০ থেকে ৮৪, সূরা হূদ ৭৪ থেকে ৮৩, সূরা আল হিজর ৫৭ থেকে ৭৭, আল-সূরা আম্বিয়া ৭১ থেকে ৭৫, সূরা আশ শু‘আরা ১৬০ থেকে ১৭৪, সূরা আল আনকাবুত ২৮ থেকে ৭৫, সূরা আস সাফফাত ১৩৩ থেকে ১৩৮ এবং সূরা আল-কামার ৩৩ থেকে ৩৯ আয়াত।
[২] এখানে تبصرون শব্দটির দু অর্থ হতে পারে: (এক) চাক্ষুষ দেখা। তখন এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। সম্ভবত এ সবগুলো অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এক. এ কাজটি যে অশ্লীল ও খারাপ তা তোমরা জানো না এমন নয়। বরং জেনে বুঝে তোমরা এ কাজ করো। [সা‘দী] দুই. তোমরা প্রকাশ্যে কোনো প্রকার রাখ-ডাক ছাড়াই এ অশ্লীল কাজ করে যাচ্ছো। কারণ, তারা এ সমস্ত কদৰ্য কাজগুলো লোকসমক্ষেই করে বেড়াত। তাদের বিভিন্ন বৈঠকেও তারা সেটা করত। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] অন্যদিকে চক্ষুষ্মান লোকেরা তোমাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করছে, যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আর তোমরা নিজেদের মজলিসে বদকাম করে থাকো।’’ [সূরা আল-আনকাবূত ২৯] (দুই) অন্তর দিয়ে জেনে উপলব্ধি করা। তখন অর্থ হবে, তোমরা অন্তর দিয়ে ভাল করেই জানো ও বোঝ যে, কোনো ক্রমেই এ কাজটি ভাল নয়। তারপরও তোমরা সেটা করে যাচ্ছ। [কুরতুবী]
‘তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক অজ্ঞ [১] সম্প্রদায়।’
[১] تَجۡهَلُونَ শব্দের মূল হলো جهالة। এর প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে নির্বুদ্ধিতা ও বোকামি। [আল-কাসেমী, মাহাসীনুত তাওয়ীল ৩/৫০, ৪/৩৭৬; উসাইমীন, তাফসীরু সূরাতায়িল ফাতিহা ওয়াল বাকারাহ ২৩৫] গালি গালাজ ও বেহুদা কাজ কারবার করলেও তাকে জাহেলী কাজ বলা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন। [দেখুন, বুখারী ৩০] আবার এ শব্দটি জ্ঞানহীনতা অর্থেও ব্যবহার করা হয়, [ইবন কাসীর] তখন এর অর্থ হবে, তোমরা নিজেদের এ খারাপ কাজটির পরিণাম জানো না। তোমরা পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞ হয়েই এ ধরণের জঘন্য কাজ করছ। তোমরা জানো না যে, এর শাস্তি কত ভয়াবহ হতে পারে। তোমরা তো একথা জানো, তোমরা যা অর্জন করছো তা প্রবৃত্তিকে তৃপ্তি দান করে। কিন্তু তোমরা জানো না এ চরম অপরাধমূলক ও জঘন্য ভোগ লিপ্সার জন্য শীঘ্রই তোমাদের কেমন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবার এটাও অর্থ হতে পারে যে, এটা যে হারাম সেটা তোমরা জান না বা জানতে চেষ্টা করছ না। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
លទ្ធផលស្វែងរក:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".