‘আমরা তো এটাই বলি, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দ্বারা আবিষ্ট করেছে [১]।‘ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী করছি এবং তোমারাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর [২],
[১] হূদ আলাইহিসসালামের আহবানের জবাবে তার দেশবাসী মুর্খতা সুলভ উত্তর দিল যে, আপনি তো আমাদেরকে কোনো মু'জিযা দেখালেন না। শুধু মুখের কথায় আমরা নিজেদের বাপ দাদার আমলের উপাস্য দেব-দেবীগুলোকে বর্জন করবো না এবং আপনার প্রতি ঈমানও আনব না। বরং সন্দেহ করছি যে, আমাদের দেবতাদের নিন্দাবাদ করার কারণে আপনার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে গেছে। তাই আপনি এমন অসংলগ্ন কথা বলেছেন। অর্থাৎ আপনি কোনো দেব-দেবী, বা কোনো মহাপুরুষের আস্তানায় গিয়ে কিছু বেয়াদবী করেছেন যার ফল এখন আপনি ভোগ করছেন। এতে বুঝা গেল যে, তারা এক ধরনের অজানা ভয় করছিল যা এক ধরনের শির্ক। সুবহানাল্লাহ! কিভাবে তারা এতবড় একজন বিবেকবান মানুষকে বিবেকহীন বলে অপবাদ দিলো। যদি আল্লাহ বর্ণনা না করতেন তবে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের নিঃস্বার্থ ও ভালো লোকের ব্যাপারে এ কথা বলা অত্যন্ত বেমানান। কিন্তু হুদ আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণভাবে নিজেকে এর থেকে বিমুক্ত ঘোষণা করেছেন এভাবে যে, এ ব্যাপারে আমার ভরসা আছে যে, আমাকে কোনো কিছু পেয়ে বসে নি। আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি আর তোমরাও সাক্ষী থেকো যে, আমি তোমাদের শরীকদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। [সা’দী] বর্তমানে অনেক মানুষ তাদের পীর বা কবরের মানত বন্ধ করলে বা তাদের কবর পুজার বিরোধিতা করলে কোনো কারণে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এ ধরনের কথা বলে থাকে। তারা বলে যে, অমুক লোককে অমুক পীরের বদ-দো'আয় ধরেছে। অমুক কবরের শাপে অমুক ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে শির্ক। এটাকেই বলা হয় ভয়ের মাধ্যমে শির্ক করা। এ ধরনের অজানা ভয়ই বর্তমানে অধিকাংশ শির্কের কারণ।
[২] অর্থাৎ তাদের কথার উত্তরে হুদ আলাইহিসসালাম নবীসুলভ নির্ভীক কষ্ঠে জবাব দিলেন, তোমরা যদি আমার কথা না মান তবে শোন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আর তোমরাও সাক্ষী থাক যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সব অলীক উপাস্যদের প্রতি আমি রুষ্ট ও বিমুখ। এখন তোমরা ও তোমাদের দেবতারা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট সাধনের এবং আমার উপর আক্রমনের চেষ্টা করে দেখ আমাকে বিন্দুমাত্র অবকাশ দিও না। এত বড় কথা আমি এজন্য বলছি যে, আমি আল্লাহ তা'আলার উপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখি; যিনি আমার এবং তোমাদের একমাত্র পালনকর্তা। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা সরল পথে রয়েছেন। অথাৎ তিনি তাঁর যাবতীয় ফয়সালা, তাকদীর, তাঁর যাবতীয় শরীআত ও নির্দেশ, তাঁর সমস্ত প্রতিদান প্রদান, সওয়াব দান এবং শাস্তি প্রদানে ন্যায়, ইনসাফ, প্রজ্ঞা ও প্রশংসাপূর্ণ পথেই রয়েছেন। তার কোনো কাজ তাকে প্রশংসাপূর্ণ সেই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে না। [সা’দী]
সমগ্র জাতির মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে এমন নির্ভীক ঘোষণা ও তাদের দীর্ঘ দিনের লালিত ধর্মীয় ধ্যান-ধারণায় আঘাত হানা সত্বেও এত বড় সাহসী ও শক্তিশালী জাতির মধ্যে কেউ তার একটি কেশও স্পর্শ করতে পারল না। আসলে এটা হুদ আলাইহিসসালামের একটি মু'জিযা। এর দ্বারা একে তো তাদের এ কথার জবাব দেয়া হয়েছে যে, আপনি কোনো মু'জিযা প্রদর্শন করেননি। দ্বিতীয়তঃ তারা যে বলত তাদের কোনো কোনো দেব-দেবী আপনার মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিয়েছে তাও বাতিল করা হল। কারণ দেব-দেবীর যদি কোনো ক্ষমতা থাকত তবে এত বড় কথা বলার পর ওরা তাকে জীবিত রাখত না।
‘আল্লাহ্ ছাড়া। সুতরাং তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর; তারপর আমাকে অবকাশ দিও না [১]।
[১] তারা যে কথা বলে আসছিল যে, আপনার কথায় আমরা আমাদের উপাস্যদের ত্যাগ করতে প্রস্তুত নই -এর জবাবেই একথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে: আমার এ সিদ্ধান্তও শুনে রাখো, আমি তোমাদের এসব উপাস্যের প্রতি চরমভাবে বিরূপ ও অসন্তুষ্ট।
আমি তো নির্ভর করি আমার ও তোমাদের রব আল্লাহ্র উপর; এমন কোনো জীব-জন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়াত্তাধীন নয় [১]; নিশ্চয় আমার রব আছেন সরল পথে [২]।
[১] পূর্বোক্ত বাক্যে তাদের দাবী ‘আপনার ওপর আমাদের কোনো দেবতার অভিশাপ পড়েছে’ –তাদের এ বক্তব্যের জবাবেই একথা বলা হয়েছে। এর অর্থ প্রতিটি সৃষ্টিই তার সম্পূর্ণ কর্তৃত্বাধীন। আরবরা ‘ললাটের চুল’ কারো হাতে থাকা বলে কর্তৃত্ব থাকার কথা বুঝায়। [তাবারী; মুয়াসসার] তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেটাকে ঘুরান, যেখান থেকে ইচ্ছা নিষেধ করেন। কেননা কেউ কারো ললাটের চুল ধরে ফেললে সে তার কর্তৃত্বাধীন হয়ে যায়। তাকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘুরাতে পারে। [কুরতুবী] সুতরাং তোমরা আমার কোনো ক্ষতি করতে সমর্থ হবে না। [কুরতুবী] অর্থাৎ সমস্ত জীব-জন্তুই যেহেতু তাঁর পূর্ণ কব্জায় সেহেতু তারা কিভাবে মুমিনের প্রতি কু-দৃষ্টি বা অভিশাপ দিতে পারে? যারা আল্লাহ্র উপর ভরসা করে তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড আল্লাহ্ই দেখাশুনা করবেন। এটাই তো স্বাভাবিক। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে এর অর্থ, তাঁর মুঠিতেই সমস্ত সৃষ্টিজীবের ভাগ্য নিহিত। [কুরতুবী] এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা ইউনূস ৭১ আয়াত।
[২] অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেন ঠিকই করেন। তাঁর প্রত্যেকটি কাজই সহজ সরল। তিনি পূর্ণসত্য ও ন্যায়ের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্ব করে যাচ্ছেন। তুমি পথ ভ্রষ্ট ও অসৎকর্মশীল হবে এবং তারপরও আখেরাতে সফলকাম হবে, আর আমি সত্য-সরল পথে চলবো ও সৎকর্মশীল হবো এবং তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত ও অসফল হবো, এটা কোনোক্রমেই সম্ভবপর হতে পারে না। তিনি যে সমস্ত নির্দেশ দেন তা তাদের প্রতি দয়াবশতঃ প্রদান করেন। তাদের প্রয়োজন পূরণার্থে, তাঁর নিজের কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। তিনি দয়া-দাক্ষিন্য, ইহসান ও রহমতের নিমিত্তে তাদেরকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নিজের কোনো প্রযোজনে তা করেন নি। বান্দারা তাঁর কাছে কিছু পাবে সে হিসেবে তিনি দিচ্ছেন ব্যাপারটি এরকম নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে ন্যায়, ইনসাফ, হিকমত ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে যাকে যা দেওয়ার তিনি দেবেন। [ইবনুল কাইয়্যেম, মিফতাহু দারুস সা’আদাহ ২/৭৯; মাদারেজুস সালেকীন ৩/৪২৫]
‘অতঃপর তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও আমি যা সহ তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়ছি, আমি তো তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং আমার রব তোমাদের থেকে ভিন্ন কোনো সম্প্রদায়কে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না [১]। নিশ্চয় আমার রব সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।’
[১] ‘আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনছিনা’ তাদের একথার জবাবে এ উক্তি করা হয়েছে। হুদ আলাইহিসসালাম বললেন, তোমরা যদি এভাবে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে থাক তবে জেনে রাখ, যে পায়গাম পৌঁছানোর জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে আমি তা যথাযথভাবে তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছি। অতএব, তোমাদের অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে যে, তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব ও গযব আপতিত হবে, তোমরা সমূলে নিপাত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর আমার রব তোমাদের স্থলে অন্য জাতিকে এ পৃথিবীতে আবাদ করাবেন। তোমরা যা করছ তাতে তোমাদেরই সর্বনাশ করছ আল্লাহ তা'আলার কোনো ক্ষতি করছ না। আমার পালনকর্তা সবকিছু লক্ষ্য রাখেন, রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তোমাদের সব ধ্যান-ধারণা ও কার্যকলাপের তিনি খবর রাখেন।
আর যখন আমাদের নির্দেশ আসল তখন আমরা হূদ ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং রক্ষা করলাম তাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে [১]।
[১] কিন্তু হতভাগা দল হুদ আলাইহিস সালাম এর কোনো কথায় কর্ণপাত করল না। তারা নিজেদের হঠকারিতা ও অবাধ্যতার উপর অবিচল রইল। অবশেষে প্রচণ্ড ঝড় তুফান রূপে আল্লাহর আযাব নেমে এল। সাত দিন আট রাত যাবত অনবরত ঝড় তুফান বইতে লাগল। বাড়ী ঘর ধ্বসে গেল, গাছ পালা উপড়ে পড়ল, গৃহ ছাদ উড়ে গেল, মানুষ ও সকল জীবজন্তু শূণ্যে উখিত হয়ে সজোরে যমীনে নিক্ষিপ্ত হল, এভাবেই সুঠাম দেহের অধিকারী শক্তিশালী একটি জাতি সম্পূর্ণ ধ্বংস ও বরবাদ হয়ে গেল। ‘আদ জাতির উপর যখন প্রতিশ্রুত আযাব নাযিল হয় তখন আল্লাহ তা'আলা তার চিরন্তন বিধান অনুযায়ী হুদ আলাইহিস সালাম ও সঙ্গী ঈমানদারগণকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে আযাব হতে রক্ষা করেন।
আর এ ‘আদ জাতি তাদের রবের নিদর্শন অস্বীকার করেছিল এবং অমান্য করেছিল তাঁর রাসূলগণকে [১] এবং তারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করেছিল।
[১] তাদের কাছে মাত্র একজন রাসূলই এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি তাদেরকে এমন এক বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন যে দাওয়াত সবসময় সব যুগে ও সকল জাতির মধ্যে আল্লাহর নবীগণ পেশ করতে থেকেছেন, তাই এক রাসূলের কথা না মানাকে সকল রাসূলের প্রতি নাফরমানী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
আর এ দুনিয়ায় তাদেরকে করা হয়েছিল লা’নতগ্রস্ত এবং লা’নতগ্রস্ত হবে তারা কিয়ামতের দিনেও। জেনে রাখ! ‘আদ সম্প্রদায় তো তাদের রবকে অস্বীকার করেছিল। জেনে রাখ! ধ্বংসই হচ্ছে হূদের সম্প্রদায় ‘আদের পরিণাম [১]।
[১] ‘আদ জাতির কাহিনী ও আযাবের ঘটনা বর্ণনা করার পর আপরাপর লোকদের শিক্ষা ও সতর্কীকরণের জন্য বলেছেন যে, কাওমে ‘আদ আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর রাসূলগণকে অমান্য করেছে, হঠকারী পাপিষ্ঠদের কাজ করেছে, যার ফলে দুনিয়াতে তাদের প্রতি গযব নাযিল হয়েছে এবং আখেরাতে অভিশপ্ত আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে।
আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম [১]। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদেরকে বসবাস করিয়েছেন [২]। কাজেই তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর আর তাঁর দিকেই ফিরে আস। নিশ্চয় আমার রব খুব কাছেই, ডাকে সাড়া প্রদানকারী [৩]।‘
[১] ৬১ থেকে ৬৮ পর্যন্ত ৮ আয়াতে সালেহ আলাইহিসসালামের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যিনি ‘আদ জাতির দ্বিতীয় শাখা ‘কাওমে সামূদ’ এর প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তার কাওমকে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিলেন। দেশবাসী তা প্রত্যাখান করে বলল, এ পাহাড়ের প্রস্তরখন্ড থেকে আমাদের সম্মুখে আপনি যদি একটি উষ্ট্রী বের করে দেখাতে পারেন তাহলে আমরা আপনাকে সত্য নবী বলে মানতে রাজী আছি। সালেহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে এই বলে সতর্ক করলেন যে, তোমাদের চাহিদা মোতাবেক মু'জিযা প্রদর্শনের পরেও তোমরা যদি ঈমান আনতে দ্বিধা প্রকাশ কর তাহলে কিন্তু আল্লাহ তা'আলার বিধান অনুসারে তোমাদের উপর আযাব নেমে আসবে, তোমরা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপরও তারা নিজেদের হঠকারিতা থেকে বিরত হল না। আল্লাহ তা'আলা তাঁর অসীম কুদরতে তাদের চাহিদা মোতাবেক মু'জিযা প্রকাশ করলেন। বিশাল প্রস্তরখন্ড বিদীর্ণ হয়ে তাদের কথিত গুণাবলী সম্পন্ন উষ্ট্রী আত্মপ্রকাশ করল। আল্লাহ তা'আলা হুকুম দিলেন যে, এ উন্ত্রীকে কেউ যেন কোনোরূপ কষ্ট-ক্লেশ না দেয়। যদি এরূপ করা হয় তবে তোমাদের প্রতি আযাব নাযিল হয়ে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করল, উষ্ট্রীকে হত্যা করল। তখন আল্লাহ তা'আলা কঠোরভাবে তাদেরকে পাকড়াও করলেন। সালেহ আলাইহিসসালাম ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণ নিরাপদে রক্ষা পেলেন। অন্য সবাই এক ভয়াবহ গর্জনে ধ্বংস হল।
[২] প্রথম বাক্যাংশে যে দাবী করা হয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই, এটি হচ্ছে সেই দাবীর সপক্ষে যুক্তি। মুশরিকরা নিজেরাও স্বীকার করতো যে, আল্লাহই তাদের স্রষ্টা। এ স্বীকৃত সত্যের ওপর যুক্তির ভিত্তি করে সালেহ আলাইহিস্সালাম তাদেরকে বুঝান, পৃথিবীর নিম্প্রাণ উপাদানের সংমিশ্রণে যখন আল্লাহই তোমাদের অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদমকে এ পার্থিব অস্তিত্ব দান করেছেন এবং তিনিই যখন এ পৃথিবীর বুকে জীবন ধারণের ব্যবস্থা করেছেন, তখন তিনি ছাড়া আর কে বন্দেগী লাভের অধিকার পেতে পারে? সুতরাং তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। [সা’দী]
[৩] অর্থাৎ তিনি তাঁর অতি নিকটে যে তাঁকে কোনো কিছু চাওয়ার জন্য ডাকে বা তাঁর ইবাদতের মাধ্যমে তাঁকে আহবান করে। তিনি তার ডাকে সাড়াও দেন। প্রার্থিত বিষয় তাকে দান করেন, ইবাদত কবুল করেন, সাওয়াব দেন পূর্ণরূপে। এখানে জানা আবশ্যক যে, আল্লাহর নৈকট্য দু'ধরনের, এক. ব্যাপক, দুই. বিশেষ। ব্যাপক নৈকট্য হচ্ছে, তিনি তাঁর জ্ঞানে সবার নিকটে, সমস্ত সৃষ্টি জগত সে হিসেবে তার নিকটে। আর এটাই আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেছেন, “আর আমরা তার গ্রীবাস্থিত ধমনীর চেয়েও নিকটতর।" [সূরা কাফ ১৬] আর বিশেষ নৈকট্য হচ্ছে, তিনি তার ইবাদাতকারী, যাচ্ঞাকারী, যারা তাকে ভালবাসে তাদের নিকটে থাকেন। আর এ নৈকট্য সম্পর্কে অন্যত্রও তিনি বলেছেন, “আর সিজদা করুন এবং আমার নিকটবতী হোন।" [সূরা আল-আলাক ১৯] অনুরূপ সূরা হুদের আলোচ্য আয়াত। তাছাড়া আরও এসেছে, “আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।” [সূরা আল-বাকারাহ ১৮৬] এ ধরনের নৈকট্য এমন যে, আল্লাহর বিশেষ দয়া, দো'আ কবুল হওয়া, উদ্দেশ্য হাসিল হওয়া এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এজন্যই এ আয়াতের শেষে ‘মুজীব’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। [সা'দী; ইবন তাইমিয়্যা, মাজমু' ফাতাওয়া ৫/৪৯৩]
তারা বলল, ‘হে সালেহ্! এর আগে তুমি ছিলে আমাদের আশাস্থল [১]। তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ ‘ইবাদাত করতে তাদের, যাদের ‘ইবাদাত করত আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা[২]? নিশ্চয় আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছি সে বিষয়ে, যার প্রতি তুমি আমাদেরকে ডাকছ।’
[১] অর্থাৎ "তাওহীদের দাওয়াত ও প্রতিমা পুজা থেকে আমাদের বারণ করার আগ পর্যন্ত আপনার সম্পর্কে আমাদের উচ্চাশা পোষণ ছিল যে, আপনি আগামীতে আমাদের নেতৃত্ব দান করবেন।” [কুরতুবী] তারা এটাই বলতে চাচ্ছিল যে, আপনার বুদ্ধিমত্তা, বিচারবুদ্ধি, বিচক্ষণতা, গাম্ভীর্য ও মর্যাদাশালী ব্যক্তিত্ব দেখে আমরা আশা করেছিলাম যে, আপনি ভবিষ্যতে একজন বিরাট নামী-দামী ব্যক্তি হবেন। একদিকে যেমন বিপুল বৈষয়িক ঐশ্বর্যের অধিকারী হবেন তেমনি অন্যদিকে আমরাও অন্য জাতি ও গোত্রের মোকাবিলায় আপনার প্রতিভা ও যোগ্যতা থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাবো। কিন্তু আপনি এ তাওহীদ ও আখেরাতের নতুন ধূয়া তুলে আমাদের সমস্ত আশা-আকাংখা বরবাদ করে দিয়েছেন। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা বাল্যকাল হতেই নবীগণকে যোগ্যতা ও উন্নত স্বভাব চরিত্রের অধিকারী করে থাকেন। যার ফলে সবাই তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হতো। কিন্তু নবুওয়াতের দাবী ও মুর্তি পুজা থেকে বারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই সেসব লোক তার বিরোধিতা ও শক্ৰতা শুরু করেছিল। তাদের প্রত্যাশার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে যখন তিনি তাওহীদ ও আখেরাত এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলীর দাওয়াত দিতে থাকলেন তখন তারা তাঁর ব্যাপারে কেবল নিরাশই হলো না বরং তাঁর প্রতি হয়ে উঠলো অসন্তুষ্ট। তারা বলতে লাগলো, বেশ ভালো কাজের লোকটি ছিল কিন্তু কি জানি তাকে কি পাগলামিতে পেয়ে বসলো, নিজের জীবনটাও বরবাদ করলো এবং আমাদের সমস্ত প্রত্যাশাও ধূলায় মিশিয়ে দিল। [দেখুন, তাবারী; সা’দী] আররের মুশরিকরাও অনুরূপ করেছিল। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের কথা ঘোষণা করার পূর্বে সমগ্র আরববাসী তাকে সত্যবাদী ও বিশ্বাসী মনে করত এবং 'আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কিন্তু যখনই তিনি এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানালেন তখনই তারা বিরোধিতা করতে লাগল।
[২] সালেহ্ আলাইহিসসালাম বলেছিলেন, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো প্রকৃত মাবুদ নেই এবং এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীতে বসবাস করিয়েছেন। এর জবাবে এ মুশরিকরা বলছে, এদের ইবাদতাও পরিত্যাগ করা যেতে পারে না। কারণ, বাপ-দাদাদের আমল থেকে এদের ইবাদাত হতে চলে আসছে। তাছাড়া আপনি আমাদেরকে যে দিকে আহবান করছেন সেটা নিয়ে আমরা বিভ্রান্তিকর সন্দেহে আছি। তারা যেন এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে, যদি আমরা আপনার কথার সত্যতা জানতে পারতাম তবে অবশ্যই আপনার অনুসরণ করতাম। এটা অবশ্যই তাদের মিথ্যা কথা। কারণ, পরবর্তী আয়াতে সালেহ আলাইহিস সালাম তাদের কাছে বিষয়টি আরও খোলাসা করে বর্ণনা করেছেন। আসলে তারা এ সমস্ত মিথ্যাচার করেই যাচ্ছিল। [সা’দী ]
Contents of the translations can be downloaded and re-published, with the following terms and conditions:
1. No modification, addition, or deletion of the content.
2. Clearly referring to the publisher and the source (QuranEnc.com).
3. Mentioning the version number when re-publishing the translation.
4. Keeping the transcript information inside the document.
5. Notifying the source (QuranEnc.com) of any note on the translation.
6. Updating the translation according to the latest version issued from the source (QuranEnc.com).
7. Inappropriate advertisements must not be included when displaying translations of the meanings of the Noble Quran.
លទ្ធផលស្វែងរក:
API specs
Endpoints:
Sura translation
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/sura/{translation_key}/{sura_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified sura (by its number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114)
Returns:
json object containing array of objects, each object contains the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".
GET / https://quranenc.com/api/v1/translation/aya/{translation_key}/{sura_number}/{aya_number} description: get the specified translation (by its translation_key) for the speicified aya (by its number sura_number and aya_number)
Parameters: translation_key: (the key of the currently selected translation) sura_number: [1-114] (Sura number in the mosshaf which should be between 1 and 114) aya_number: [1-...] (Aya number in the sura)
Returns:
json object containing the "sura", "aya", "translation" and "footnotes".